
আপনি যদি একুশ শতকে এসে চিন্তা করেন যে .পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং মানেই লাইক, কমেন্ট ,শেয়ার তাহলে আপনি ভূল জগতেই আছেন। বর্তমান প্রতিযোগিতাময় বিশ্বে উন্নয়নের জন্য শুধু মাত্র ব্যতিক্রমধর্মী সিভির উপর নির্ভর করে থাকা যায় না। আমার সম্পর্কে চাকরি দাতা, ক্লায়েন্ট, ব্যবসায়িক পরিচিতজন, ম্যানেজার ইত্যাদি ব্যাক্তিবর্গ বিভিন্ন উৎস থেকে আমাদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে।
পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং কী?
সাধারন ভাবে বলতে গেলে পার্সোনাল ব্যান্ড হলো প্রফেশনাল রেপুটেশন। এজন্য আপনার নিজেকেই নির্ধারন করতে হবে। কেমন হবে আপনার সাজ, পোশাক, অন্যের সাথে কমিউনিকেশন করার ধরণ, ক্যারিয়ার এবং স্কিল সেট। আপনি সক্রিয় ভাবে আপনার ব্যান্ড ঠিক করে ফেলেছেন।
আপনার সম্পর্কে যে তথ্যগুলো সচারাচর পাওয়া যায়। ( ইন্টারনেটে বা লোকমুখে) সেগুলো যে আপনার পেশা দায়িত্ব ব্যক্তিত্ব এবং সক্ষমতা, সব সময় তুলে ধরেছে ব্যাপারটি হয়তো তেমন নাও হতে পারে। আরো সরল কথা বলতে গেলে ,
অনলাইন ও অফলাইনের মাধ্যমে নিজের পেশা , দক্ষতা ও অর্জন কে অন্যকে দেখানো এবং নিজের নেটওয়ার্কের মানুষদের টপ অফ দ্য মাইন্ডে থাকাকে বলা যেতে পারে পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং ।
পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং না বড়াই?
অনেকই আছেন পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং এর সাথে বড়াই করা কে তালগোল পাকিয়ে পেলেন। আসলে দুইটার মধ্যেই আকাশ পাতাল পাথর্ক্য রয়েছে। পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং হলো এক প্রকার সেলফ প্রমোশন । যেখানে আপনি আপনার গল্প, সাফল্য, জীবন প্রবাহ , ব্যাক্তিত্ব তুলে ধরছেন। আর অন্য দিকে বড়াই করা মানে হচ্ছে এক প্রকার অহংকার করা। যেমন ধরুন আপনি কোন একটা ভালো কোম্পানিতে চাকরী পেলেন। তখন তা আপনি আপনার সোস্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করলেন যে এভাবে একটা পোষ্ট লিখে –
“ আলহামদুলিল্লাহ্, আমি এ প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানিতে ঐ পদে আজকে কাজ পেয়েছি। তারপর আপনি আপনার জার্নির গল্পটা শেয়ার করলেন এবং সাথে কিছু টিপসও দিয়ে দিলেন ।
”
আবার অন্যদিকে , আপনি ঐ একই চাকরি পেলেন এবং সোস্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করলেন যে,
” আমি আজকে ঐ কোম্পানি তে চাকরি পেয়েছি। আমি তো জানতামই আমিই ঐ কোম্পানিতে চাকরি পাবো। আমি ছাড়া আর কে পাবে!
”
উপরের দুইটি কথার মধ্যে প্রথম টি আপনার ব্যাক্তিত্ব , পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং প্রকাশ করবে আর দ্বিতীয়টা দ্বারা বড়াই করা তথা অহংকারকেই প্রকাশ করবে।
পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং কেন এত প্রয়োজনীয়?
বর্তমান সময়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাড়িঁয়েছে পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং । নানা কারণেই পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। নিচে কিছু উল্লেখ্যযোগ্য হলো :
★ বিশ্বাসযোগ্যতা সৃষ্টি করার জন্য।
★নতুন চাকরির সুযোগ কে আকৃষ্ট করার জন্য ।
★ অনলাইন প্রভাব বৃদ্ধি করার জন্য।
★ প্রফেশনাল নেটওয়ার্ক বূদ্ধি করার জন্য।
★কাজ এবং ক্যারিয়ার কে নিরাপদ করার জন্য।
★ নিজের নেটওয়ার্ক এর মানুষদের টপ অফ মাইন্ডে থাকার জন্য ইত্যাদি।
নিজেকে গুগল করুন
মানুষ আপনার সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিবে, আপনার অনলাইন উপস্থিতির উপর ভিত্তি করে। কোন জিনিসের বিশ্বাসযোগ্যতা নির্ণয়ে বর্তমান সময়ে সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হলো সেই সম্পর্কে গুগল সার্চ করা।
সুতরাং আপনি আপনার নাম দিয়ে গুগল সার্চে দেখতে পারেন কী রেজাল্ট আসে আপনার সম্পর্কে।
নিজেকে গুগল করার চেক লিস্ট
★ গুগল সার্চে আপনার সম্পর্কে যে তথ্যগুলো পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো কি আপনি প্রত্যাশা করেন। ( হ্যাঁ, না)
★আপনার এই সমস্ত তথ্য যদি আপনার ক্লায়েন্ট, সহকর্মী, বস বা ভবিষ্যৎ চাকরিদাতারা জানতে পারে, তাহলে কি আপনি স্বস্তিবোধ করবে ? (হ্যাঁ, না)
★এই তথ্য গুলো কি আপনার পেশাগত জীবনে সমর্থন করে ? (হ্যাঁ, না)
অনলাইন উপস্থিতির চর্চা রাখুন
★ বর্তমানে আপনার ফেসবুক লিংক দিন, টুইটার, পিন্টারেস্ট ইত্যাদি সোশ্যাল নেটওয়ার্কে কি ধরনের প্রাইভেসি সেটিং ব্যাবহার করছেন?
★আপনার প্রোফাইলে কি কোন ধরনের আপত্তিকর কনটেন্ট, ছবি বা ভিডিও ট্যাগ আছে। অথবা কোন ধরনের মতামত বা কারো পোস্টে সেনসিটিভ কমেন্ট করেছেন কি? অথবা আপনার বায়োগ্রাফিতে কি এমন কোন তথ্য আছে। যা আপনার ব্যাক্তিগন ইমেজকে খারাপ করে।
★আপনার কি কোন ধরনের স্যোসালমিডিয়া বা ব্লগ এ্যাকাউন্ট আছে যেটির বিষয়ে আপনি ভুলে গেছেন
যা আছে তাই নিয়ে শুরু করুন
★আপনার কি কোন সোশাল মিডিয়া প্রোফাইল আছে?
★ আপনি কি ঠিক করেছেন কোন সোশ্যাল মিডিয়াকে আপনি পেশাগত ভাবে ব্যাবহার করবেন। আর কোনটি কে ব্যাক্তিগত কাজে ব্যবহার করবেন.?
★ আপনার কি কোন পার্সোনাল ই-মেইল এ্যাকাউন্ট আছে.?
★ আপনার ই-মেইল এর নাম কি প্রফেশনাল.?
★ আপনি কি কোন নেটওয়ার্কিং ইভেন্টে যোগদান করেন?
★আপনার কি নিজের কোন ওয়েবসাইট বা ব্লগ আছে?
★আপনি সোশ্যাল মিডিয়া বা ব্লগ ওয়েব সাইটি নিয়মিত পোস্ট দেন?
আপনার পার্সোনাল ভ্যালু প্রোপোজিশন গড়ে তুলুন
★ আপনাকে কোন জিনিস টি ইউনিক/ স্বতন্ত্র করে গড়ে তুলবে।
★কোন একটি কাজ আপনি অন্য সকলের থেকে ভালো করতে পারবেন।
★ কোন বিষয়টির জন্য আপনি সকলের থেকে এগিয়ে থাকেন, ( আপনার পার্সোনাল ভ্যালু)
★অন্য মানুষের বর্ণনা থেকে আপনার বর্ণনার কি মিল আছে?
★কোন জিনিসটি সকালে আপনাকে ঘুম থেকে উঠতে বাধ্য করে।
★ কোন দক্ষতা আপনি সহজেই গড়ে তুলতে পারেন যা অন্যরা কল্পনা ও করতে পারে না।
★আপনার সন্তান ও নতুন প্রযন্মের জন্য কি রেখে যেতে চান।
ব্রান্ডের বিজনেস কার্ড তৈরি করুনঃ-
★আপনার নাম এবং ব্যবসায়ের নাম।
★আপনার পদবি।
★আপনার পার্সোনাল ভ্যালু প্রোপোজিশন অর্থাৎ আপনি আপনার কাষ্টমার বা অর্ডিয়েন্সদের কি ভ্যালু অফার করতে চাচ্ছেন। এবং তারা কেনো সেটি কিনবে বা গ্রহণ করবে, এই বিষয়টিকে আপনার পার্সোনাল ব্রান্ডের প্রমিজ হিসেবে মূল্যয়ন করুন।
★আপনার সাথে যোগাযোগের তথ্য ( ই-মেইল টেলিফোন নাম্বার) এবং যদি থাকে তাহলে সোশ্যাল মিডিয়া এবং ওয়েব সাইট / ব্লগের লিস্ট দিয়ে দিন। ব্যাক্তিগত কাজে ব্যাবহৃত কনটাক্ট নাম্বার দেওয়া থেকে বিরত থাকুন কারন এটি আপনার পার্সোনাল ব্যান্ড স্মৃতিতে বাধা হয়ে দাড়াতে পারে।
আপনার অনলাইন উপস্থিতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখুন
★কাভার ফটো বা প্রোফাইল পিকচার সঠিকভাবে কি আপনার পার্সোনাল ব্র্যান্ড কে তুলে ধরতে পারছে। ( হ্যাঁ, না)
★আপনি আপনার ইন্টাস্ট্রি সম্পর্কিত লিংক ইন গ্রুপের সাথে কি জড়িত আছে। এবং নিয়মিত এসব গ্রুপে কি কন্টিবিউট করছেন।
★ আপনি কি সোশ্যাল মিডিয়াতে এমন কোন কনটেন্ট শেয়ার করছেন। যা আপনাকে থট লিডার বা ইন্ডাস্ট্রি এক্রপার্টের আসনে বসতে পারে।
★ আপনার প্রোফাইলটি কি ভালো করে সাজানো হয়েছে বা পূরন করা হয়েছে।
★আপনার যদি একটি ব্লগ বা ওয়েব সাইট থাকে সেখানে কি আপনার সোশ্যাল এ্যাকাউন্টের লিংক যোগ করেছেন।
★ যদি এই ধরনের কোন সুপারিশ না থেকে থাকে তাহলে আপনার বস বা কলিগদের কি আপনার সম্পর্কে সুপারিশ করতে বলেছেন। (হ্যাঁ, না)
★আপনি যখন সোশ্যাল মিডিয়া অন্যের সাথে কমিউনিকেট করেন তখন আপনার কথা বলার ধরন ( টোন) কি আপনার পার্সোনাল ব্রান্ডের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়.? ( হ্যাঁ, না)
এই সবগুলোর একটি সুসন্বিত রুপ যা কোন বিক্রেতা বা বিক্রেতাগোষ্ঠীর পন্য ও সেবার নিজস্ব পরিচিতি গড়ে তোলে এবং প্রতিযোগীদের চেয়ে নিজেদের কে আলাদা ভাবে উপস্থাপন করে।
পরিশেষে,
পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং হলো একটা টুল। কোন টুল বা বস্তু ব্যবহার না করলে যেন তার কোন গুন থাকে না।তেমনি পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং এর ক্ষেত্রে একই। তাই আপনার পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং কে ঐ হিসেবে ব্যবহার করুন লোকে যাতে কিছু না বললে পারে।