বিজ্ঞানী সফদর আলীর মহা মহা আবিষ্কার – মুহম্মদ জাফর ইকবাল (কিশোর উপন্যাস )
বইয়ের নামের সাথে সাথে কাজেরও অনেকটা বিচিত্রতা লক্ষ্য করা যায় ।বিজ্ঞানী সফদর আলী এক আজব মানুষ। তাকে শখের বিজ্ঞানীও বলা যায় । নানা বিস্ময়কর বৈজ্ঞানিক জিনিসের আবিষ্কারে তার আগ্রহ সীমাহীন । তার চিন্তাধারাও অন্যান্য রকম। বিজ্ঞানী সফদর আলীর সাথে লেখকের দেখা হয়েছে জিলিপি খেতে গিয়ে। । বিজ্ঞানী সফদর আলীল প্রতিটি কাজে রয়েছে বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার প্রতিফল।
তিনি জিলিপি ঠান্ডা করার জন্য যেমন বিশেষ ধরণের ফ্যান ব্যবহার করেন আবার তেমনি বৃষ্টির সময় চশমার গ্লাসে পানি পড়লে দেখার সমস্যা যেন না হয় সেজন্য চশমার গ্লাসে গাড়ির মত ব্যবহার করেন থাকেন ওয়াইপার ।আবার ভিজা জামা কাপড় শুকানোর জন্য ব্যবহার করেন বাষ্পীভূত প্রক্রিয়া।যার মাধ্যমে নিমেশেই জামাকাপড় শুকনো হয়ে যায় ।আবার চোর ধরার যন্ত্র আবিষ্কার করেন। সফদর আলীর মনে করেন নাকি সংখ্যা দশ-ভিত্তিক না হয়ে ষোলভিত্তিক হওয়া দরকার, কেন হবে সেটাও বলেছেন। এভাবেই বিজ্ঞানী সফদর আলীর সাথে লেখকের অনেক ভাব জমে যায়।নানান প্রয়োজন তাদের মধ্যে টেলিগ্রাম আদান প্রদান হতে থাকে।
কাচ্চি বিরিয়ানি,জংবাহাদুর ,গাছগাড়ি,পীরবাবা,হেরোইন-কারবারি, মোরগ ইত্যাদি বিষযগুলো নিয়ে বিজ্ঞানী সফদর আলীর নানান ধরনের আবিষ্কার নিয়ে লিখেছেন লেখক।
কাচ্চি বিরিয়ানি:
যেহেতু তিনি বিজ্ঞানি সেহেতু সাধারণ মানুষের তুলনায় ওনার চিন্তাশক্তি একধাপ এগিয়ে।তিনি কাচ্ছি বিরিয়ানি রান্না করবেন তবে সেটা কোনো বাবুর্চি দিয়ে নয়, গিনিপিগ দিয়ে!!!অবাক করা কথা হলেও তিনি কম্পিউটারের কাজ করার লজিক খাটিয়ে গিনিপিক দের মাধ্যমে কাচ্ছি বিরিয়ানি রান্না করিয়েছেন। তারপর আবা্র, এই কাচ্ছি বিরিয়ানি রান্না নিয়েই পড়েন সমস্যায় । তারপর গল্পকথক ইকবাল স্যার এবং সফদর আলী দুজনের বুদ্ধিতে সমস্যার সমাধান করেন।
জংবাহাদুর :
সফদর আলী বিজ্ঞানী মানুষ।ওনার দুইটি হাতে কোনো কাজ হয় না,ওনার চারটি হাত প্রয়োজন, কেন প্রয়োজন সেটাও বলেছেন।পরে অবশ্যই বুঝতে পেরেছন দুইটা হাতই ঠিক, তবে ওনার একজন সহকারী প্রয়োজন তবে সেটা কোনো মানুষ নয় ! সেটা বানর হতে হবে। বানরই হবে তার সহকারী। বানর খুজঁতেও অনেক হাস্যকর কান্ড ঘটে,একবার বানির খুজঁতে গিয়ে মহা হাসির কান্ড ঘটে ,একজন ব্যাক্তি সফদর আলীকে গালাগালি করে বলে ওনার গাঁয়ের চামরা দিয়ে নাকি জুতো বানাবে।তবে ওনি ওনার চামরা নিয়ে চিন্তিত না হয়ে ,” মানুষেল চামরা দিয়ে জুতা বানালে কতদিন টিকবে সেটা নিয়েই এক প্রকার গবেষনা করে বললেন, যে জিনিজ টিকবে না, সে জিনিজ বানিয়ে কি লাভ? মানুষের চামড়া পাতলা,সেটা এক সপ্তাহর বেশিও টিকবে না।” এরপর শেষ পযর্ন্ত একটা বানর পায়।যার নাম জংবাহাদুর।আবারসেই জংবাহাদুরকে নিয়েও অনেক কান্ডকারখানা ঘটে।
গাছগাড়ি :
সফদর আলী রমর্না র্পাক গিয়ে নানা প্রকার গাছ দেখে ওনার মাথায় গাছ নিয়ে গবেষনার করা ইচ্ছা হলো। এবং তিনি গাছ গাড়ি বানাবেন। গাছগাড়িা অনেকটা এরকম যে, গাছ নিজে নিজেই রোদের কাছে যাবে, নিজেই নিজের খাদ্য তৈরি করবে, অর্থাৎ গাছ নিজের প্রয়োজনীয়তা নিজেই পূরণ করবে। বেশ কষ্টকর ব্যাপার হলেও, তবে সফদর আলীর মত বিজ্ঞানীর এটি তৈরি করা কোন ব্যাপারই দাঁড়ায়না।তিনি সেই গাছ গাড়িটা তৈরিও করেছেন।
পীরবাবা:
মানুষের ভুল ধারণা ভাঙ্গাতে ইকবার স্যার আর সফদর আলীর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাটা সত্যিই ভালো ছিল ।আর পীরের ভন্ডামী ধরার কৌশলটা অনেক হাস্যকর আর ধারুণ ছিল। ধর্মীয় বিশ্বাসী হওয়া উত্তম তবে অন্ধ ধর্মীয় পীর বিশ্বাসী হওয়া ক্ষতিকর।সকল অলৌকিক ক্ষমতা প্রযোগ করাটা আল্লাহর মাধ্যমেই এবং আল্লাহর ইচ্ছাই সম্ভব।
হিরোইন-কারবারি:
প্রাকৃতিক ব্যস্ততার পর নিজেদের মনকে চা্ঙ্গা করার জন্য কিছুদিন রিলাক্স থাকা দরকার। সেই প্রেক্ষিতেই লেখক আর বিজ্ঞানী সফদর আলী কক্সবাজার পাড়ি জমান। তবে যেহেতু বিজ্ঞানী সেহেতু ভ্রমনের ক্ষেত্রেও ওনার বৈজ্ঞানিক ছোঁয়া বাদ পড়ে নি।
ভ্রমণের জন্যও তৈরি করে রেখেছেন ভ্রমণবন্দি, ইনফ্রায়েড চশমা আরো কতকি!!…. ওখানে রিলাক্স করতে গেলেও আর ওনাদের রিলাক্স করা আর পুরাপুরি হলো না।ছুটটে হলো হিরোইন কারবারিদের পিছনে।শেষ পযর্ন্ত সফদর আলীর অসাধারণ বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার আর কৌশলের মাধ্যমে ধরা পরলো হিরোইন কারবারির দল ।
মোরগ:
ইকবাল সাহেব এর অনুরোধে তৈরি করেন মোরগির ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর ইনকিউবেটর যন্ত্র। মোরগের ইনকিউবেটরের সাহায্যে জন্ম নেয়া মোরগগুলো উপর আরো গবেষণা করে মোরগি গুলোকে আজব প্রকৃতি করে তুলেন ।
কারণ মোরগি গুলো তখন আর সাধারণ মোরগি নেই!দেখতে অনেকটা পিশাচের মত হয়ে গেছে, যা দেখে ইকবাল সাহেব এই মোরগ গুলো দেখে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান।মজা ব্যাপার হলো মোরগদের সাহায্যেই একটা চোর ধরা পড়ে যায়,যে কিনা সফদর আলীর চোর ধরার যন্ত্র নিয়ে গিয়েছিল।